পিএম ধন ধান্য কৃষি যোজনা – PM ধন ধান্য কৃষি যোজনা (PMDDKY) কী? জানুন ২০২৫-২৬ অর্থবর্ষ থেকে চালু হওয়া এই নতুন সরকারি প্রকল্পের খুঁটিনাটি, যা বদলে দিতে পারে কৃষকদের জীবন।
পিএম ধন ধান্য কৃষি যোজনা –
আমাদের দেশ মূলত কৃষিনির্ভর। কৃষকদের অক্লান্ত পরিশ্রমে আমাদের অন্ন সংস্থান হয়। কিন্তু অনেক সময়ই কৃষকরা তাঁদের ন্যায্য অধিকার থেকে বঞ্চিত হন। তাঁদের জীবনযাত্রার মান উন্নয়ন এবং কৃষিক্ষেত্রে আধুনিকীকরণের জন্য ভারত সরকার নিয়ে এসেছে ‘পিএম ধন ধান্য কৃষি যোজনা’ (PMDDKY)। এই প্রকল্পটি বিশেষভাবে তৈরি করা হয়েছে দেশের কৃষকদের সার্বিক কল্যাণের কথা মাথায় রেখে।এটি এমন একটি প্রকল্প যা দেশের কৃষি ব্যবস্থায় একটি বড় পরিবর্তন আনার ক্ষমতা রাখে।
বার্ষিক বাজেট | ৬ বছরের মোট বাজেট | জেলার সংখ্যা | প্রধান সুবিধা | মূল লক্ষ্য |
২৪,০০০ কোটি টাকা | ১,৪৪,০০০ কোটি টাকা | ১০০ | ১.৭ কোটি কৃষক | ফসল উৎপাদন, আয়, সুস্থ পরিবেশ |
PM ধন ধান্য কৃষি যোজনা (PMDDKY) আসলে কী?
২০২৫-২৬ সালের কেন্দ্রীয় বাজেটে এই প্রকল্পের কথা ঘোষণা করা হয় এবং ২০২৫ সালের জুলাই মাসে কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভা এটিকে অনুমোদন দেয় । এই প্রকল্পের মূল উদ্দেশ্য হলো দেশের যে ১০০টি জেলা কৃষিতে পিছিয়ে আছে, সেগুলির সার্বিক উন্নয়ন ঘটানো ।
এই প্রকল্পটি নীতি আয়োগের (NITI Aayog) সফল ‘আকাঙ্ক্ষী জেলা’ (ADP)-এর মডেল দ্বারা অনুপ্রাণিত, যা এর আগে দেশের ১১২টি পিছিয়ে পড়া জেলার উন্নয়নে সাহায্য করেছে । PMDDKY প্রকল্পে আগামী ছয় বছরের জন্য প্রতি বছর ২৪,০০০ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে, যা মোট ১.৪৪ লক্ষ কোটি টাকায় দাঁড়ায় । এর মাধ্যমে প্রায় ১.৭ কোটি কৃষক, বিশেষ করে ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক চাষীরা উপকৃত হবেন ।
পিএম ধন ধান্য কৃষি যোজনার মূল লক্ষ্য –
- ফসল উৎপাদন বৃদ্ধি (Productivity Boost): যেসব জেলায় গম, ধান ইত্যাদি ফসলের ফলন গড়ের চেয়ে কম, সেখানে নতুন প্রযুক্তি, বীজ, সার ব্যবহার করে ফলন বাড়ানো।
- প্রাকৃতিক ও জৈব চাষের প্রসার (Sustainable Farming): রাসায়নিক সারের ব্যবহার কমিয়ে, জৈব সারের দিকে ঝোঁক বাড়ানো।
- সেচ সুবিধা উন্নয়ন (Irrigation Improvement): যেখানে সারা বছর জল থাকে না, সেখানে সেচের সুবিধা বাড়ানো হবে।
- ফসল সংরক্ষণ (Crop Storage): গ্রাম ও ব্লক পর্যায়ে গড়ে তোলা হবে আধুনিক গোলাঘর, যাতে চাষিরা সহজেই ফসল মজুদ করতে পারে, দাম কমে গেলে অপচয় রোধ করা যায়।
- ঋণ সুবিধা (Credit Access): ব্যাঙ্ক, কুড়ি সামিত্র, ক্ষুদ্র ঋণ সংস্থা—সবকিছুর সমন্বয় ঘটানো হবে যাতে তড়িঘড়ি ঋণ পাওয়া যায়।
- নজরদারি (Digital Monitoring): ডিজিটাল ড্যাশবোর্ডে ১১৭টি সূচকে (Key Performance Indicators) সপ্তাহ, মাসে, তারিখে পরখ হবে কর্মকাণ্ড।
এই প্রকল্পে কাদের জন্য, কোথায়?
- জেলা নির্বাচন: নীতি আয়োগ (NITI Aayog) ও কৃষি মন্ত্রণালয় মিলে বেছে নেবে ১০০টি জেলা—প্রতিটি রাজ্য/কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল থেকে অন্তত একটি। নির্বাচনের ভিত্তি হবে: স্বল্প উৎপাদনশীলতা, কম ফসল চক্র, কম ঋণের সুবিধা।
- কৃষক: প্রধানত যারা ২ হেক্টরের কম জমির মালিক (৮৬% ভারতীয় কৃষকই এই শ্রেণিভুক্ত)।
- সর্বাধিক গুরুত্ব: পশ্চিমবঙ্গ, বিহার, ঝাড়খণ্ড, ওড়িশা, উত্তরপ্রদেশ—যেসব রাজ্যে কৃষি এখনও প্রধান উপজীবিকা।
গুরুত্বপূর্ণ তথ্য ও টিপস –
- ডিজিটাল অ্যাপ্লিকেশন: আপনার জেলার নামের পাশে যদি আসে, তাহলে দেরি না করে ব্লক, পঞ্চায়েত বা কৃষি দপ্তরে যোগাযোগ করুন।
- প্রকল্প সম্পর্কে তথ্য: সরকারি ওয়েবসাইট, স্থানীয় কৃষি অফিস, বা সংবাদমাধ্যম থেকে সব আপডেট পেতে পারবেন।
- কাগজপত্র: জমির দলিল, আধার, প্যান কার্ড—সব নথি আগে থেকে গুছিয়ে রাখুন।
- কৃষি প্রশিক্ষণ: প্রকল্পের আওতায় নিয়মিত প্রশিক্ষণ, প্রদর্শনী হবে—এগুলোতে অংশ নিন।
- সুযোগ-সুবিধা পেতে সচেতনতা: অনেক সময় সুবিধা পাওয়া যায় না শুধু অজ্ঞতার জন্য। গ্রাম সভা, রাইজ মেলায় যোগ দিন।
- ডিজিটাল পেমেন্ট: বেতন, ভর্তুকি সবই সরাসরি ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে যাবে—তাই Jan Dhan অ্যাকাউন্ট খুলে রাখুন।
- সরকারের ৩৬টি পুরনো কৃষি প্রকল্পকে একত্রিত করে এই একটি প্রকল্প চালু করা হয়েছে ।
নিঃসন্দেহে, পিএম ধন ধান্য কৃষি যোজনা ( PM Dhan Dhaanya Krishi Yojana ) ভারতের কৃষি ব্যবস্থার জন্য একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ। যদি এই প্রকল্পটি সঠিকভাবে প্রয়োগ করা হয়, তবে এটি কেবল কৃষকদের আয় বাড়াতেই সাহায্য করবে না, বরং দেশের খাদ্য সুরক্ষাকেও মজবুত করবে। এই ধরনের সরকারি প্রকল্পের সুবিধা গ্রহণ করে এবং আধুনিক পদ্ধতিতে চাষাবাদ করে আমাদের কৃষক ভাই-বোনেরা নিশ্চয়ই এক নতুন ভবিষ্যতের দিকে এগিয়ে যেতে পারবেন।
PM Dhan Dhanya Krishi Yojana (PMDDKY) কাদের জন্য?
উত্তর প্রদেশ, পশ্চিমবঙ্গ, বিহার, ঝাড়খণ্ড, ওড়িশা, মধ্যপ্রদেশ, মহারাষ্ট্রের মতো রাজ্যের ১০০টি নির্বাচিত জেলার ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক কৃষকদের জন্য, যারা ২ হেক্টরের কম জমির মালিক।
সুবিধা পেতে কোন কাগজপত্র লাগবে?
জমির দলিল (ভূমি রেকর্ড), কৃষক স্বীকৃতি পত্র, আধার বা প্যান কার্ড, ব্যাঙ্ক পাসবুক, মোবাইল নম্বর—এগুলো অবশ্যই প্রস্তুত রাখতে হবে।
PM ধন ধান্য কৃষি যোজনা প্রকল্পের অধীনে কারা সুবিধা পাবেন?
এই প্রকল্পের অধীনে প্রাথমিকভাবে ভারতের ১০০টি নির্বাচিত জেলার কৃষকরা সুবিধা পাবেন। বিশেষ করে ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক চাষীদের উপর বেশি জোর দেওয়া হয়েছে ।
এই প্রকল্পটি কবে থেকে শুরু হবে?
PM Krishi Yojana 2025 প্রকল্পটি ২০২৫-২৬ অর্থবর্ষ থেকে শুরু হয়ে আগামী ছয় বছর ধরে চলবে ।
এই প্রকল্পের মূল সুবিধা কী?
এর মূল সুবিধা হলো উন্নত সেচ, ফসল সংরক্ষণের আধুনিক ব্যবস্থা, সহজে ঋণ প্রাপ্তি, এবং প্রযুক্তিগত সহায়তা। এর মাধ্যমে sustainable farming India-কে উৎসাহ দেওয়া হবে এবং কৃষকদের আয় বাড়ানো হবে ।